সিসি ডেস্ক: নাজমুল হুদা আশরাফ হোসেনবিএনপির সাবেক নেতাদের নেতৃত্বে আরো দুটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ এখন সময়ের ব্যাপার। আগামী শুক্রবার তৃণমূল বিএনপি নামে একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেবেন দলের সাবেক নেতা ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। আর তারিখ ঠিক না হলেও শিগগিরই বিএনপির সংস্কারবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত আশরাফ হোসেন আরেকটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছেন।
বিএনপির সাবেক এই দুই নেতা সোমবার যায়যায়দিনের সঙ্গে আলাপকালে নতুন দল গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। নাজমুল হুদা জানান, আগামী শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূল বিএনপি নামে নতুন দলের ঘোষণা দেবেন। এই দলের আহ্বায়ক থাকবেন তিনিই।
নতুন দলের ধরন সম্পর্কে নাজমুল হুদা বলেন, একটি দলের সত্যিকারের গণতন্ত্র চর্চা বলতে যা বোঝায়, তা থাকবে তৃণমূল বিএনপিতে। যত বড় নেতাই এই দলে আসতে চান না কেন প্রথমে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় নেতার আসনে আসতে হবে। প্রথমে ওয়ার্ড, থানা, জেলা এরপর জাতীয় কাউন্সিল করা হবে। এখানে পরিবারতন্ত্রের কোনো চর্চা কখন-ই হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তিন মাসের মধ্যেই জাতীয় কাউন্সিল হবে। এরপর প্রতি তিন বছর পর পর হবে জাতীয় কাউন্সিল।
নতুন দলে বিএনপির কোনো নেতা থাকছেন কিনা জানতে চাইলে জবাবে নাজমুল হুদা বলেন, দলটি হবে তৃণমূল বিএনপি। নতুন এই দলে তৃণমূল থেকে অনেকেই আসবেন বলে আশা করেন। এ ছাড়া বিএনপিতে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকায় অনেকেই হতাশা থেকে হয়তো আসতে পারেন।
কিছুদিন আগে বিএনএ গঠন করার পর আবার কেন তৃণমূল বিএনপির গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হুদা বলেন, সেটা বিলুপ্ত হচ্ছে না। বিএনএ জোটের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে তৃণমূল বিএনপি। শুক্রবার তৃণমূল বিএনপির ঘোষণার সময় বিএনএ জোটে থাকা ৩০টি দলের নেতারাও উপস্থিত থাকবেন।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করায় ২০১০ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হন নাজমুল হুদা। পরে দলে ফেরার আবেদন করলে তাকে বিএনপিতে নেয়া হলেও ভাইস চেয়ারম্যান পদ ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। এরপর খালেদা জিয়াকে আল্টিমেটাম দিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করে তিনি বিএনএফ গঠন করেন। অল্পদিনের ব্যবধানে সেই দলেও থাকতে পারেননি। এরপর গত বছর নামসর্বস্ব ২৫টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ) নামে একটি জোট গঠন করেন।
অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির সংস্কারপন্থী নেতারা দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে তৎপর হয়ে উঠেছেন। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। আগামী বছরের শুরুর দিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে দল গঠনের কার্যক্রম শুরু করবেন। এরই মধ্যে দলের খসড়া গঠনতন্ত্র তৈরির কাজেও হাত দিয়েছেন সংস্কারপন্থীরা। নতুন দলে বিএনপির সংস্কারপন্থী অর্ধশতাধিক সাবেক সংসদ সদস্যসহ শতাধিক নেতা থাকছেন। আর এই দলের নেতৃত্বে থাকছেন বিএনপির বহিষ্কৃত যুগ্ম মহাসচিব সাবেক হুইপ আশরাফ হোসেন।
এ বিষয়ে আশরাফ হোসেন জানান, তারা নতুন দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। তাদের গণতান্ত্রিক কল্যাণমুখী একটা দল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে পরিবারতন্ত্রের প্রাধান্য থাকবে না। এখন রাজনৈতিক দলগুলোতে পরিবারতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে। মূলত এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে কাজ করতে চান।
কবে নাগাদ নতুন দলের ঘোষণা দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঠিক হয়নি। এখনো কিভাবে করা যায়, ঘোষণাপত্রে কি থাকতে পারে এসব নিয়ে আলোচনা চলছে।
নতুন দলের সম্ভাব্য নাম কি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই দলটি গঠন করা হবে নাগরিক সম্মেলনের মাধ্যমে। নাগরিকরাই এর নাম ঠিক করবেন।
তার সঙ্গে বিএনপির কারা থাকছেন জানতে চাইলে আশরাফ বলেন, এখনই নাম বলতে চান না। সংস্কারের পক্ষে থাকা অনেকেই আছেন। তবে বিগত সময়ে অনেকেই থাকার কথা বলে পরে থাকেননি। এজন্য আগে থেকে কারো নাম বলাটা ঠিক হবে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এর আগে বিএনপিতে থাকাকালেও অনেক নেতাই দলের অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানানোর কথা বলেছিলেন। আর প্রতিবাদ করার সময়ে অনেকে সঙ্গে থাকারও আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাদের অনেককেই পাওয়া যায়নি। এজন্য দল গঠনের কাঠামো প্রায় সম্পন্ন হলেই নাম প্রকাশ করা হবে। তিনি জানান, সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে। এ আহ্বানে কেউ সাড়া দেবেন, কেউ দেবেন না-এটাই স্বাভাবিক। যারা আসবেন তাদের স্বাগত জানাবেন। যারা আসবেন না, তাদের জোর করা হবে না।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৎকালীন বিএনপির মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়া বিএনপির শতাধিক সাবেক সংসদ সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার ফর্মুলা দিয়ে সংস্কার প্রস্তাব দেন। এরপর খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে মান্নান ভূঁইয়া ও তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। এরপর খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে সংস্কারবাদীদের মধ্য থেকে কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে ক্ষমা করে দলে পুনর্বাসিত করলেও অধিকাংশ নেতাই দল থেকে ছিটকে পড়েন। এরপর থেকে তারা বিভিন্ন সময় নতুন দল গঠনের আওয়াজ দিলেও তা সম্ভব হয়নি। ছিটকেপড়া নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেডএ খান, কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহিরউদ্দিন স্বপন, দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, বগুড়ার সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শহিদুজ্জামান, ময়মনসিংহের সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন দুলু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন, চাঁদপুর জেলার সাবেক সভাপতি এসএ সুলতান টিটু, বরগুনা জেলার সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মনি, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম কায়সার লিঙ্কন, বরগুনা জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলেন ভুট্টো, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আখতার বুলু, শাম্মী শের প্রমুখ।